তুমি সবই জানো পুরুষ
-রানা চ্যাটার্জী
হে পুরুষ,হে মনুষ্য কূলশ্রেষ্ঠ
নারী পুরুষের সমতার বাণী প্রচারক,
পুরুষ তন্ত্রের দম্ভের যাদুদন্ড হাতে সমাজের আজন্ম কাল হতে চলে আসা নিয়ম নীতির যাঁতাকলে নিষ্পেষিত দগ্ধ নারীদের গোপন
আখ্যান যদি তুমি জানতে!
যদি জানতে কখনো কালাহান্ডির রুক্ষ গ্রামের পায়ে বেড়ি পড়া মহিলাদের দশ ক্রোশ পথ হেঁটে, পাথুরে খাদান থেকে প্রাণ হাতে মাত্র দু ঘড়া জল পরিবারের জন্য বয়ে আনার কি অসহনীয় ক্লান্তি।
জানার চেষ্টা করতে যদি বৃদ্ধ কামুক শ্বশুরের যৌন অত্যাচারে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া অতিষ্ঠ অষ্টাদশী বৌমার ,ভিন রাজ্যে কাজ করতে
যাওয়া স্বামীর প্রতীক্ষার গভীরতা।
যদি জানতে চাইতে কোলিয়ারীতে কাজ পাইয়ে দেবার অন্যতম শর্ত হিসাবে আদিবাসী মেয়ের
মাসের পর মাস ধর্ষিতা হবার মানসিক গ্লানি।
পুরুষ জানতে কি পারো বেশ্যালয়ে স্ফূর্তি করে আসা লম্পট স্বামীর চরিত্রহীনতার জন্য কটাক্ষ যখন রাস্তায় বেরুনো তার পতিব্রতা একনিষ্ঠ সহধর্মিনীর ওপর আছড়ে পড়ে সে তীব্রতা কতটা
এফোঁড় ওফোঁড় করে রক্তক্ষরণ ঝরায়?
স্রেফ মেয়ে হবার অপরাধে বৃহৎ সংসারে এক সাথে বড়ো হয়ে ওঠা স্বত্বেও ভাই বোনের খাদ্য
তালিকার ফারাক,নিম্নমান হবার কুরুচি
মানসিকতার উৎস কোথা থেকে আসে,
কূলশ্রেষ্ঠ পুরুষ যদি একটু দৃষ্টি দিতে!
তবু সব জানো তুমি পুরুষ…
অনিয়মের প্রতিটি রন্ধ্র, নিয়ম নীতির স্যাঁতস্যাঁতে
চোরাপথে প্রতিনিয়ত দোমড়ানো মোচড়ানো নারী স্বত্তা।
সব জানো তবু ঠুলি পড়া চোখে,চুপ করে দেখো
অফিসে বসের লোভাতুর চোখ,
ভিড় বাসে ছুঁক ছুঁক নারী শরীর ছুঁতে আসা জোঁক,
ভাজা মাছ উল্টে খেতে না পারা নপুংসক দলের ভণ্ডামি,খালাসি কন্ডাক্টরের স্পর্শ সুখের কামনা।
তবু সমতার প্রশ্নে পিঠ চাপড়ে বলো,
সাবাস সভ্যতা,সাবাস অগ্রগতি,যথার্থ ভারসাম্যতা।
সত্যিই পুরুষ তুমি সব জানো,কখন চলতে হয়,থামতে কখন কড়া বেত্রাঘাতে প্রয়োজন অনুসারে সমাজ শুদ্ধিকরণের শান্তিজল কমুন্ডুল।